বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
খুলনা ব্যুরো::
খুলনা মহানগরী ও জেলার তিনটি এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করার পর থেকে করোনা রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহ আগে যেখানে প্রতি লাখে ১০জন করে মানুষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছিল, সেখানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮জনে। বর্তমানে এই তিনটি জায়গা রেড জোন থেকে ইয়েলো জোনে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, লকডাউনের কারণে মানুষের চলাচল কমে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং দোকানপাট বন্ধ রাখার কারণে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকায় গত ২৫ জুন মধ্য রাত থেকে ২১ দিনের জন্য খুলনা মহানগরীর ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং রূপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণার মাধ্যমে লকডাউন করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত খুলনা জেলা কমিটি। রেড জোন সফলে নগরীর ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং আইচগাতি ইউনিয়নের ৬৪টি সড়কের প্রবেশ দ্বারে ব্যারিকেড ও আইচগাতি ইউনিয়নের ৬টি ঘাটে ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া এসব স্থানে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, লকডাউন ঘোষিত তিনটি এলাকায় প্রায় ১ লাখ ২০হাজার মানুষ বসবাস করে। রেড জোন ঘোষণার আগে উক্ত তিনটি এলাকায় ১০জনের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর গত ১৩ দিনে তা কমে ৮জনে নেমে এসেছে।
সূত্র জানায়, লকডাউন ঘোষণার আগে রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নে ৪৬জন করোনা রোগী ছিল। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১জনে। এছাড়া লকডাউন ঘোষণার পর জনবহুল এই ইউনিয়নে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। লকডাউন ঘোষণার আগে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৩জন। গত দুই সপ্তাহে এ ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৮ জন। এর আগে যারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়েছেন। অপরদিকে লকডাউন ঘোষণার আগে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৬৫জন। গত দুই সপ্তাহে এ ওয়ার্ডে মাত্র একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আইচগাতী ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন বোঝা যাচ্ছে, মানুষ সচেতন হলে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, মানুষ প্রথম দিকে করোনাকে গুরুত্বই দেয়নি। এ সব মানুষের জন্যই আমাদের ওয়ার্ডে লকডাউন দিতে হয়েছে।
অপরদিকে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মফিজুর রহমান গোর্কি বলেন, মানুষ সচেতন না হলে লডডাউন দিয়েও করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে না।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, খুলনা মহানগরীর ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই তিনটি জায়গায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লকডাউনের কারণে গত দু’ সপ্তাহে এই তিনটি জায়গায় করোনা রোগীর সংখ্যা কমেছে। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে মূলত মানুষের চলাচল কমে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাজারঘাট নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং দোকানপাট বন্ধ রাখার কারণে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে এই তিনটি জায়গা রেড জোন থেকে ইয়েলো জোনে নেমে এসেছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এখন এই তিনটি জায়গাকে গ্রিন জোনে নিয়ে আশার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
তিনি জানান, করোনা রোগীদের জন্য খুলনা সদর হাসপাতালে ১২টি নিবিড় পরিচর্যাসহ (আইসিইউ) ৪২ বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটি চালু হলে করোনা রোগীরা আরো বেশি সেবা পাবে।